শুরু হল ২০২৪ সাল। আগের বছরগুলোর মত এবারও প্রস্তুত আপনি জীবনে অভূতপূর্ন পরিবর্তন আনতে। অন্যদের মত আপনিও ডায়েরি নিয়ে এতক্ষণে বসে পড়ছেন সাড়া বছরের গোল ফিক্স করে নিউ ইয়ার রেজুলেশন তৈরিতে।

নতুন বছরের প্রথম থেকে শুরু হবে কঠোর অনুশীলন, প্রফেশনাল উন্নয়ন চাই। অন্তত ২ ঘণ্টা জিমতো করবেনই। কমপক্ষে একটা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বের হয়ে আসবেন, প্রতি রাতে দুই ঘন্টা করে পড়াশোনা বা সেলফ ডিভালপমেন্ট আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন নিয়মিত। ব্যাস এই তো নিউ রেজুলেশন, ওহ সরি কোল্ড ড্রিংকস – সুগার ইন্টেইক বাদ দিবেন, ভীষণ ক্ষতিকর একটা অভ্যাস। এগুলোও নিশ্চয়ই নোট নিয়েছেন। আরও কত কত চিন্তা গ্রেট!

বছরের রেজুলেশনের জন্য আপনি একটু বেশিই প্রস্তুত। এবার হবে চমৎকার স্টার্ট, কারণ সময় টা আপনার জন্য একদম পারফেক্ট, মন মেজাজও চাঙ্গা।

কিন্তু গত ১০ বছরে যে প্ল্যান কাজ করেনি, আপনার কি মনে হয় ২০২৪ সালে এসে হুট করেই সব এচিব করা সম্ভব হবে? যদি একটু লজিক্যালি চিন্তা করেন, তাহলে আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন বরাবরের মতো এবারও আপনি প্রথম সপ্তাহে হোঁচট খাবেন। হাল ছেড়ে দেবেন, এবং পরবর্তী সপ্তাহ, মাস অথবা ২০২৫ সালের জন্য অপেক্ষা করা শুরু করবেন।

জনপ্রিয় লেখক Rolf Dobelli উনার ‘The Art of Thinking Clearly’ বইটিতে মানুষের চিন্তার ৯৯ টি ভুলের কথা বলেছেন, যার একটি হচ্ছে Procrastination. এই টপিকে লেখক দেখিয়েছেন কেন দীর্ঘসূত্রতা/গড়িমসি করে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ি।

Procrastination বা দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে জরুরী কিছু করতে আলসেমি করা, পারফেক্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করা, অতঃপর শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে দায়সাড়া ভাবে কাজটা শেষ করা অথবা দিনের পর দিন ফেলে রাখা।

স্কুল কলেজের হোম ওয়ার্ক, কিংবা ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট করার সময় এগুলো আমরা করে এসেছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই অভ্যাস আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছে এবং যতই দিন যাচ্ছে, আশেপাশে যত বেশি দূরত্ব বাড়ছে আমারা সমানতালে পিছিয়ে পড়ছি।

গত মাসে আমি Procrastination নিয়ে লিখেছিলাম পড়ে ফেলুন এক নিঃশ্বাসে! https://www.facebook.com/abutaher.im/posts/816398967161415

সমাজে প্রচলিত ভুল ধারনা হচ্ছে উইল পাওয়ার, বা ইচ্ছে শক্তি ‘অসীম’, যার এটা ভালো আছে, তার কোনদিনই এটার শক্তি ফুরয় না। কিন্তু লেখকের মতে উইল-পাওয়ার ব্যাটারীর মত, এটাকে চার্জ দিতে হয় এবং টাইম টু টাইম চার্জ না দিলে ফুরিয়ে যায়। এক সময় নিঃশেষও হয়।

অ্যামেরিক্যান সোশ্যাল সাইকোলোজিস্ট Roy Baumeister তেমনি এক এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন, উইল পাওয়ারের উপর। দুটি স্টুডেন্ট গ্রুপকে তিনি আলাদা দুটি রুমে রেখেছিলেন, যেখানে সুস্বাদু কুকিজ এর সুগন্ধ সুবাস আসছিল। গ্রুপ ১কে বলা হলো তারা যত ইচ্ছা তত কুকিজ খেতে পারবে। কিন্তু গ্রুপ ২ এর সামনে হাজির করা হলো রান্না করা মুলা, এবং তাদেরকে খাওয়া থেকে বিরত রাখা হলো। ঘন্টাখানেক পর দুটি গ্রুপকেই একটি কঠিন ম্যাথ পরীক্ষায় পাঠানো হলো, দেখা গেল গ্রুপ ২ যারা কুকিজ খেতে পারেনি, তারা দুই গুণ সময়ে কঠিন ম্যাথ সমাধান করা ছেড়ে দিচ্ছিল। অন্যদিকে গ্রুপ ১ যারা কুকিজ খেয়ে ছিল যাদের কোন প্রকার ইচ্ছা শক্তি বা সংগ্রামের পরীক্ষা দিতে হয়নি, তারা ম্যাথের প্রবলেম গুলোতে শেষ পর্যন্ত ফোকাস ছিল।

এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, উইল পাওয়ার আসলে ক্রমাগত কমতে থাকে এবং তাতে চার্জ দিতে হয়। যেমনি আপনি আপনার স্মার্টফোনটির হায়েস্ট পারফরমেন্স পাওয়ার জন্য চার্জ দেন। তাই ইচ্ছাশক্তি ঘড়ির কাঁটা মেপে চলে না, আর এটাও সত্য শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি কে রিফুয়েল করে আপনি দুনিয়া জয় করতে পারবেন না। কারন আপনাকে আপনার আশেপাশের সকল ডিস্ট্রাকশনকে তুড়ী মেরে উড়িয়ে দিতে হবে।

অধ্যায় শেষে তাই লেখক তার একজন প্রতিবেশীর উদাহরণ টেনেছেন যিনি টেলিফোন এবং ইন্টারনেট কানেকশনবিহীন একটি রুমে তিনটি সেটিং দিয়ে শেষ করেছিলেন তার ডক্টরাল এর কাজ।

আরও একটা উদাহরণ দেই, আমার উস্তাজ মারকায এ পড়ার সময় উনার স্বীয় উস্তাজ মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এখনকার সালাফদের মত গবেষণায় অভিজ্ঞ মুফতি পাওয়া যায় না কেন, উনি উত্তর দিয়েছিলেন জাওয়ালের (মোবাইল) কারণে একাগ্রতা কমে গেছে আমাদের, যে কারণে মননিবেশ করা এখন কঠিন।

কড়া কিন্তু সত্যটা শুনুন, উইল পাওয়ার আপনার যতই শক্তিশালী হোক না কেন দিন শেষে আপনার আশেপাশের সকল ডিস্ট্রাকশন আপনার উইল পাওয়ার কে শুষে নিতে পারে, যেমন করে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি পার্সেন্টেজ দিনকে দিন কমতে থাকে, যদিও হয়তো আপনি একবারও হয়তো ছুঁয়ে দেখলেন না। উপরের উদাহরণ গুলো দেখেই নিশ্চয় বুঝেছেন ডিস্ট্রাকশন আমাদের কিভাবে কিল করে অথবা বিপরীতে একাগ্রতা কিভাবে আমাদের এগিয়ে দেয়!

ডিস্ট্রাকশন কমানোর জন্য আমার ছবিতে দেখানো Distraction Destroyer ফর্মুলাটা ফলো করুন, আশা করি কাজে আসবে।

নিউ ইয়ার রেজুলেশনের সাথে অধমের উপরের বিষয় গুলো মাথায় রাখার সাথে সাথে এই কয়েকটি কথাও বিবেচনায় নিতে পারেন

– হুট করে ই ডেইলি রুটিনে মেসিভ চেঞ্জ আনবেন না

– বাস্তবসম্মত, আপনাকে ইলেট্রিফাই করে এমন ডার্ক লক্ষ্য সেট করুন

– একই কোঁরে অনেক গুলো লক্ষ্য নির্ধারন করবেন না

– পারফেক্ট টাইমিং বলে কিছু নেই

– কোন কাজেই পারফেক্ট হতে যাবেন না

– মূল কাজের টাইমে কোন ডিস্ট্রাকশনকে এলাউ করবেন না

– প্রয়োজনে কম করুন, কিন্তু ১০০% ওয়ার্ক ডান ডে বজায় রাখুন

– ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স মেইন্টেইন করুন

– আন ইন্টেনশনাল না, ইন্টেনশনালি নিজেকে রিওয়ার্ড দিন।

লাস্ট বাট নট লিস্ট, একটা সামান্য সুই লাগলেও আপনার প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কাছে চাইতে শিখুন, চাওয়ার রাস্তা তৈরিতে গাফলতি থাকলে পরিহার করুন।

আপনার জীবনে আপনার ফ্যামিলিতে আপনি ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি, তাই সেলফ কেয়ারে যত্নবান হোন। পিছুটান থাকবে, অবশ্যই আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেন কিন্তু ডিসিপ্লিন্ড লাইফ ই ভালো থাকা ভালো রাখার রহস্য।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *